আয়াতুল কুরসির ১০ টি ফজিলত | আয়াতুল কুরসি কখন পড়তে হয়

আমরা অনেকেই জানি যে আয়াতুল কুরসি কুরআনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। এটি সকলের মুখস্ত করে তেলাওয়াত করা প্রয়োজন এটি অনেকগুলো ফজিলত রয়েছে যা আমাদের বিভিন্ন বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং এটি বিশেষভাবে অদৃশ্য ক্ষতি থেকে বিশেষভাবে সুরক্ষা করে।

আয়াতুল কুরসি সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত হিসেবে পরিচিত। আয়াতুল কুরসি একটি প্রসিদ্ধ আয়াত যা রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর একত্ববাদ মর্যাদা এবং গুণের বর্ণনা রয়েছে যার কারণে আয়তুল কুরসিতে আল্লাহ তায়ালা অনেক ফজিলত রেখেছেন যা পাঠ করলে অসংখ্য পণ্য লাভ হয়।

আমাদের রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

"যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার জান্নাতে যাবার পথে মৃত্যুই ছাড়া আর কোন বাধা থাকবে না।"

পোস্ট সূচিপত্রঃ আয়াতুল কুরসির ১০ টি ফজিলত

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ সহ

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম। (সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

আয়াতুল কুরসি কি?

আয়াতুল কুরসি কে আল কুরআনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আয়াত বলা হয় এর গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত গুলোর জন্য, এটি সূরা আল বাকারার ২৫৫ তম আয়াত। আয়াতুল কুরসির মোট ১০টি বাক্য রয়েছে যা আল্লাহর মর্যাদা গুণের বর্ণনা এবং ওনার সকল গুণাবলীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়াতুল কুরসি কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন এবং এটিকে আমাদের প্রতিনিয়ত পাঠ করে যেতে বলেছেন। আয়তুল কুরসি আমাদের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করে নজর এবং অদৃশ্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং এটি আমাদের জান্নাতের প্রবেশের একটি অন্যতম মাধ্যম।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

“সূরা আল-বাকারাহতে এমন একটি আয়াত রয়েছে যা কুরআনের আয়াতগুলোর নেতা। যে ঘরে এটি পড়া হয়, সেখান থেকে শয়তান বেরিয়ে যায়।”

আয়াতুল কুরসিকে সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত বলা হয় কেন

কুরআনের কিছু বিশেষ আয়াত রয়েছে যেগুলো পাঠ করার মাধ্যমে আমরা অন্যান্য আয়াতে থেকে বেশি পূর্ণ অর্জন করে থাকি। এ বিষয় নিয়ে অনেক বিতর্ক এবং অনেকের বিভিন্ন মতামত রয়েছে যেমন।
উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

হে আবু মুনযির তুমি কি জানো আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াত তোমার কাছে সবচেয়ে মহৎ?
আমি বললাম “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূম" (আয়াতুল কুরসি, সূরা বাকারা ২৫৫)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার বুকে হাত মেরে বললেন "হে আবু মুনযির তোমার জ্ঞানের বরকত হোক।"

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
"প্রতিটি জিনিসেরই একটি চূড়া থাকে, আল-কুরআন এর চূড়া হল সূরা আল-বাকারা। এটি একটি আয়াত রয়েছে যা আল-কুরআনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ।" ( সুনান আত-তিরমিযী  ২৮৭৮)

প্রিয় পাঠক আশা করি আপনারা এই দুইটা হাদিস দ্বারা বুঝতে পেরেছেন যে আল-কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াত কোনটি। এই হাদিসগুলো আল-কুরআনের করছে কে কোরানের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। সুরা বাকারার মধ্যে আয়াতুল কুরসি থাকার জন্য এটিকে কুরআনের শীর্ষ সূরা বলা হয়েছে। সূরা আল বাকারা ইসলামের মূল শিক্ষার ব্যাখ্যা করে এবং আয়াতুল কুরসি তাদের সকলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কে ধারণ করে। 

আয়াতুল কুরসির ১০ টি ফজিলত

আপনার অনেকে আয়তুল কুরসির পর্যন্ত সম্পর্কে জানেন, যে কত গুরুত্বপূর্ণ এবং কত গুরুত্বপূর্ণ এবং আয়াতুল কুরসি পাঠ করার কত উপকারিতা রয়েছে। আজকে আপনাদের সাথে আয়োজন করছি পাঠ করার 10 টি ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করব।

১। আয়াতুল কুরসী পাঠ করার মাধ্যমে সরাসরি জান্নাতে যাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন " যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাজের পর এক রুকু পাঠ করবে তার জানাতে আমাদের কেউ মাত্র মৃত্যু থাকবে"।

২। পাঠ করলে ঘর থেকে শয়তান দূরের রাখে। আয়তুল কুরসি একটি পবিত্র আয়াত করার মাধ্যমে শয়তান আপনার আশেপাশে আসতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন " যে ব্যক্তি রাতে আয়তুল কুরসী পাঠ করবে, আরো তার উপর একজন রক্ষক নিযুক্ত করবেন এবং তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না"

৩। আয়তুল কুরসি পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের সকল বিপদ প্রত্যেকের রক্ষা করেন।

৪। আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি প্রধান মাধ্যম হল আয়তুল কুরসী পাঠ করা। এটি পাঠ করলে আল্লাহর নৈকট পাওয়া যায় এবং মুমিনের আত্মার শান্তি হয়।

৫। ঘুমানোর সময় পাঠ করা। রাতে ঘুমের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাতেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, " আয়াতুল কুরসি পাঠ করে রাতে ঘুমালে সারারাত আল্লাহর হেফাজত পাওয়া যায়"।

৬। কুরআনের আয়াত পাঠ করলে শারীরিক এবং মানসিক সুরক্ষা পাওয়া যায়। আয়াতুল কুরসি সকল আয়ত্ত গুলোর মধ্যে সেরা, এজন্য আয়াতুল কুরসি পাঠ করার মাধ্যমে বিশেষভাবে মানসিক প্রশান্তি এবং বিভিন্ন শারীরিক অসুখ থেকে মুক্তি দেয়।

৭। নিয়মিত আয়তুল কুরসী পাঠ করলে দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যা সমাধান এবং বিশেষভাবে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।

৮। আল্লাহর এই তেলাওয়াতটি পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর হেফাজত অর্জন করা যায় এবং এটি আমাদের সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে।

৯। অনেকেই দুঃস্বপ্ন দেখে, পাঠ করার মাধ্যমে সে সকল দুঃস্বপ্ন দেখা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং আমাদের সেই সকল দুঃস্বপ্ন থেকে রক্ষা করে।

১০। জিন ভূতের আসর থেকে মুক্তি, আয়াতুল কুরসি একটি পবিত্র আয়াত এটি নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে স্বয়ং শয়তান দূরে থাকে। আয়তুল কুরসি পাঠ করে শরীরে ফুল দিলে জিন-ভূতের আসর এবং অনিষ্ট থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

আয়াতুল কুরসি কখন পড়তে হয়

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে আয়াতুল কুরসিঃ
আয়াতুল কুরসি দিন রাতে বারবার পড়ার নির্দেশ রয়েছে। এবং প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়তুল কুরসি পড়ার নির্দেশ রয়েছে। প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোন বাধা থাকবে না।

ঘুমানোর সময় আয়তুল কুরসিঃ
প্রতিদিন ঘুমানোর সময় আয়তুল কুরসি পড়ার চেষ্টা করবেন কেননা রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল পর্যন্ত আপনার জন্য একজন রক্ষাকর্তা নিরুক্ত থাকবেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে ফিরবে না

সকাল সন্ধ্যায় আয়তুল কুরসিঃ
সকাল সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পাঠের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে অনিষ্ঠা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারব। আয়তুল কুরসি সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত অনিষ্ঠা থেকে নিরাপদ আশ্রয় থাকবো। এবং সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনিষ্ট থেকে নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে থাকবো। এভাবে সকাল সন্ধ্যা আয়াতুল কুরসী পাঠের মাধ্যমে আমরা নিজেকে অনিষ্ঠা থেকে বিরত রেখে নিজেদের আত্মরক্ষা করতে পারবো।

উপসংহার

আয়াতুল কুরসি কোরআনের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ আয়াত। গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়াত হিসেবে পরিচিত এবং এটি আমাদের সকলের মুখস্ত করা বোঝা এবং তেলাওয়াত করা উচিত। এটি আমাদের বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে শয়তানের ক্ষতিকর ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের রক্ষা করে। অদৃশ্য খুদি থেকেও আমাদের কে সুরক্ষা করে। প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে একটি তেলাওয়াত করলে মৃত্যুর পরে  জান্নাতে যাই। আশা করি আজকের এই ব্লগ থেকে আপনারা আয়তুল কুরসির সকল ফজিলত এবং গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। প্রিয় পাঠক আপনাদের সুবিধার্থে আয়তুল কুরসির ১০ টি ফজিলত । আয়তুল কুরসি কখন পড়তে হয় লিখা। আপনি যদি এই পোষ্টটি উপকারী মনে হয় তাহলে আপনার প্রিয় মানুষদের সাথে একটি শেয়ার করে দেন যেন তারাও সম্পর্কে জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টেক সমাজের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪